05 January 2009

নিবিড় স্টেশান


মুক্তডানার বালক
ভুলে যাবে প্রিয়তম মাঠ তার
এবং ছায়াবৃক্ষ, পুঞ্জমেঘ...
যতটুকু ভুলে যাবার বাসনায়
মধ্যরাতেও অনায়াস জেগে থাকে ট্রেইন ।

জানালার শার্সিতে আসা রোদ
পরিশুদ্ধ হতে চেয়ে
কতোবার চেনা ব্রিজ থেকে
অর্ধবৃত্ততার মাঝে মিশে গেছে
যাবতীয় রেললাইন ভুলে গিয়ে-
গোনা নেই, গোনা নেই ।

প্রদক্ষিণে ভুল মাঠ-
স্বপ্নের সরঞ্জাম ও বালকহৃদয়,
যেন অমল স্মৃতিবহ ট্রেইন
ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে আছে দাঁড়িয়ে
শৈশবের রোদঝরা কোনো নিবিড় স্টেশানে ।

মোমজ


গভীর চুলের রাত্রি, দ্যাখো তুমি
নখাগ্রে তুলেছো যে দেহজ মোম
তার গায়ে কোন
অতিন্দ্রীয়তা আঁকা নেই ।

ঘাড় থেকে নেমে এসে
ভায়োলিনে মুখ গুঁজেছে যে সুর
সেখানে ছায়াগুলো লেপ্টে আছে
দেয়ালের স্বভাবগত মুক আচরনে ।

মোমের সলতেয় জ্বলছে
দূরাগত হাইওয়ে-ব্লুজ,
ফলত কিছু যৌগিক ছায়াচিত্র
অঙ্কিত এখনো দেয়ালময় ।

নৃত্যরত আগুণ
ব্যালের মতো মসৃণ হয়ে আসে-
যেন গভীর চুলের ভেতরে কোথাও
ক্ষয়ে যাচ্ছে আমাদের মোমজীবন ।

নাচ


সংলগ্ন ওয়াল্টজ্
রক্তে নেচে ওঠা অজস্র হাঙরের ঝাঁক
এইস্রোতে সাবলীল
যেন মসৃণ বাঁক ঘোরে,
মথিত স্রোত
বিবিধ নাবিকের গাঢ়ঘুমে
দেখে নাও, ভুলপায়ে কারা যেন
ছন্দকাতর এইখানে !

দিমিত্রি,
ক্ষয়ারোদে জ্যামিতিক-নাচ বহুভুলে
শিখিনি এখোনো হাঙরের দলে
বুড়োদাঁত, ক্ষুরোদাঁত সবকিছু ভুলে ।

সন্ধ্যেজড়িত ওয়াল্টজ্ ডুবে এলে
ঘোরলাগা দুইচোখে
সমস্ত মায়োপিয়া ঢলে পড়ে...

প্রবলে ।

তুমি হেসে দিচ্ছো হায়ারোগ্লিফ


বিকেলবেলার মাঠে তুমি হেসে দিচ্ছো হায়ারোগ্লিফ;
আচ্ছন্নরোদ আনত উলেন সোয়েটারের ভেতর
শায়িত তির্যক,
আমার চ্যাপ্টানো ঘাস মাড়িয়ে
তুমি চলে গেছো সৈনিকের হেলমেট,
বিকেলের হলুদমাঠে সন্তর্পনে তুমি
অস্তরাগ ভুলে আছো ।

নির্ধারিত মাঠের ওপোর প্রচ্ছন্ন আদর
বিনীত ঢুকে আছে যেভাবে
আমাদের চুলের ভেতর,
বুননে বুননে তুমি উচ্ছ্বল হেসে দিচ্ছো সাইফার

প্রণয়ের গভীরে শুধুই আঁকছো হায়ারোগ্লিফ,
নির্লিপ্ত শীত ।

তোমার কৃষিজাত এ্যাবসার্ডিটির ভেতর


কৃষির ভেতরে আমি প্রতিস্থাপন করেছি হর্ষ
এবং স্মিতহাস্য তোমার,
মথিত আকাশ থেকে জড়তার মিথ নেমে এলে
খুচরোবিক্রেতার গণনারহিত এ্যাবাকাসগুলো
জেগে ওঠে; জেগে ওঠে বিভাজিত বাণিজ্যে ।

সবুজ পদচ্ছাপ,
তুমি বণিকের দেহের খননে চিহ্নিত প্রত্নআঁধার
কোন দূরবর্তী নগরের গান তুমি,
এইসব হয়ে জেগে থাকো
নগরীর তন্দ্রালু দ্বাররক্ষীর চোখের পাতায়;
তার সুদীর্ঘ জাগরণের ভেতরে ।

ফলনের সমার্থক শব্দের মতোন
পাখির ডানায় চেপে সুনম্র রোদ আসে-
নগরীর উপকন্ঠে,
তোমার উর্বর ঠোঁট সমস্ত কৃষির ভেতরে যাতনাহীন
কী দারুণ অমিতভাষণ ভালোবাসে !

নবনীত বুক থেকে সোনালী উদ্ভাসে
ঢলে পড়া রোদ আমাদের চাষের গহিনে,
তোমার লাস্য থেকে অঝোরে
মিথ ও শষ্যরেণু
নগরীর প্রতিটি দুয়ারে ঝরে পড়ে,

ঝরতে থাকে।

তোমার হর্ষজাত এ্যাবসার্ডিটির ভেতর


তোমার হর্ষেরা ঝরে পড়ে
ঝালাইকারের দোকানের প্রতিটি স্ফুলিঙ্গে,
লালপিঁপড়ের সঘন বিন্যাসের ভেতর;
যেখানে সমস্ত নির্মাণ এসে ভাঙ্গে,
ভেঙ্গে পড়ে আমাদের
এইসব অধারাবাহিক সৌন্দর্যের কাছে ।

তোমার হর্ষেরা ঝরে পড়ে
নগরীর সমস্ত আগুনখেকো কৃষ্ণচুড়ার ডালে,
অপরাহ্নিক ঢাল থেকে
ঝালাইকারের যাবতীয় শৈলীর ভেতর
এমন নিভৃতে-

তোমার হর্ষেরা এইখানে অনাবিল ঝরে পড়ে
অস্পষ্ট নীল;
কোনো অক্সি-এসিটিলিন ফুল হয়ে ।

যেখানে মুদ্রিত শীত


মাফ্লারে নীলশীত,
প্রিজনভ্যানে চেপে অসুখী চেহারার বাচ্চারা
গড়িয়ে গেছে দূরে-
আদুরে চৌদ্দশিক ।
কলারে কলারে তীর্যক
খুলে গেছে কেমন বিভোর ফ্লানেল-রোদ !

আবেগী টাইপরাইটারে
সেই তাপ লেখা আছে শীতার্ত আঙ্গুলে,
থার্মাল বোধচ্যুত আবেশী অঞ্চলে ।

ঝরাপাতা
অবরোহণের গান শোনো ঐ,
নীলশীত ঢুকে আছে অনায়াস
সুপুষ্ট কাঠবাদামের ভেতরে ।