05 January 2009

নিবিড় স্টেশান


মুক্তডানার বালক
ভুলে যাবে প্রিয়তম মাঠ তার
এবং ছায়াবৃক্ষ, পুঞ্জমেঘ...
যতটুকু ভুলে যাবার বাসনায়
মধ্যরাতেও অনায়াস জেগে থাকে ট্রেইন ।

জানালার শার্সিতে আসা রোদ
পরিশুদ্ধ হতে চেয়ে
কতোবার চেনা ব্রিজ থেকে
অর্ধবৃত্ততার মাঝে মিশে গেছে
যাবতীয় রেললাইন ভুলে গিয়ে-
গোনা নেই, গোনা নেই ।

প্রদক্ষিণে ভুল মাঠ-
স্বপ্নের সরঞ্জাম ও বালকহৃদয়,
যেন অমল স্মৃতিবহ ট্রেইন
ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে আছে দাঁড়িয়ে
শৈশবের রোদঝরা কোনো নিবিড় স্টেশানে ।

মোমজ


গভীর চুলের রাত্রি, দ্যাখো তুমি
নখাগ্রে তুলেছো যে দেহজ মোম
তার গায়ে কোন
অতিন্দ্রীয়তা আঁকা নেই ।

ঘাড় থেকে নেমে এসে
ভায়োলিনে মুখ গুঁজেছে যে সুর
সেখানে ছায়াগুলো লেপ্টে আছে
দেয়ালের স্বভাবগত মুক আচরনে ।

মোমের সলতেয় জ্বলছে
দূরাগত হাইওয়ে-ব্লুজ,
ফলত কিছু যৌগিক ছায়াচিত্র
অঙ্কিত এখনো দেয়ালময় ।

নৃত্যরত আগুণ
ব্যালের মতো মসৃণ হয়ে আসে-
যেন গভীর চুলের ভেতরে কোথাও
ক্ষয়ে যাচ্ছে আমাদের মোমজীবন ।

নাচ


সংলগ্ন ওয়াল্টজ্
রক্তে নেচে ওঠা অজস্র হাঙরের ঝাঁক
এইস্রোতে সাবলীল
যেন মসৃণ বাঁক ঘোরে,
মথিত স্রোত
বিবিধ নাবিকের গাঢ়ঘুমে
দেখে নাও, ভুলপায়ে কারা যেন
ছন্দকাতর এইখানে !

দিমিত্রি,
ক্ষয়ারোদে জ্যামিতিক-নাচ বহুভুলে
শিখিনি এখোনো হাঙরের দলে
বুড়োদাঁত, ক্ষুরোদাঁত সবকিছু ভুলে ।

সন্ধ্যেজড়িত ওয়াল্টজ্ ডুবে এলে
ঘোরলাগা দুইচোখে
সমস্ত মায়োপিয়া ঢলে পড়ে...

প্রবলে ।

তুমি হেসে দিচ্ছো হায়ারোগ্লিফ


বিকেলবেলার মাঠে তুমি হেসে দিচ্ছো হায়ারোগ্লিফ;
আচ্ছন্নরোদ আনত উলেন সোয়েটারের ভেতর
শায়িত তির্যক,
আমার চ্যাপ্টানো ঘাস মাড়িয়ে
তুমি চলে গেছো সৈনিকের হেলমেট,
বিকেলের হলুদমাঠে সন্তর্পনে তুমি
অস্তরাগ ভুলে আছো ।

নির্ধারিত মাঠের ওপোর প্রচ্ছন্ন আদর
বিনীত ঢুকে আছে যেভাবে
আমাদের চুলের ভেতর,
বুননে বুননে তুমি উচ্ছ্বল হেসে দিচ্ছো সাইফার

প্রণয়ের গভীরে শুধুই আঁকছো হায়ারোগ্লিফ,
নির্লিপ্ত শীত ।

তোমার কৃষিজাত এ্যাবসার্ডিটির ভেতর


কৃষির ভেতরে আমি প্রতিস্থাপন করেছি হর্ষ
এবং স্মিতহাস্য তোমার,
মথিত আকাশ থেকে জড়তার মিথ নেমে এলে
খুচরোবিক্রেতার গণনারহিত এ্যাবাকাসগুলো
জেগে ওঠে; জেগে ওঠে বিভাজিত বাণিজ্যে ।

সবুজ পদচ্ছাপ,
তুমি বণিকের দেহের খননে চিহ্নিত প্রত্নআঁধার
কোন দূরবর্তী নগরের গান তুমি,
এইসব হয়ে জেগে থাকো
নগরীর তন্দ্রালু দ্বাররক্ষীর চোখের পাতায়;
তার সুদীর্ঘ জাগরণের ভেতরে ।

ফলনের সমার্থক শব্দের মতোন
পাখির ডানায় চেপে সুনম্র রোদ আসে-
নগরীর উপকন্ঠে,
তোমার উর্বর ঠোঁট সমস্ত কৃষির ভেতরে যাতনাহীন
কী দারুণ অমিতভাষণ ভালোবাসে !

নবনীত বুক থেকে সোনালী উদ্ভাসে
ঢলে পড়া রোদ আমাদের চাষের গহিনে,
তোমার লাস্য থেকে অঝোরে
মিথ ও শষ্যরেণু
নগরীর প্রতিটি দুয়ারে ঝরে পড়ে,

ঝরতে থাকে।

তোমার হর্ষজাত এ্যাবসার্ডিটির ভেতর


তোমার হর্ষেরা ঝরে পড়ে
ঝালাইকারের দোকানের প্রতিটি স্ফুলিঙ্গে,
লালপিঁপড়ের সঘন বিন্যাসের ভেতর;
যেখানে সমস্ত নির্মাণ এসে ভাঙ্গে,
ভেঙ্গে পড়ে আমাদের
এইসব অধারাবাহিক সৌন্দর্যের কাছে ।

তোমার হর্ষেরা ঝরে পড়ে
নগরীর সমস্ত আগুনখেকো কৃষ্ণচুড়ার ডালে,
অপরাহ্নিক ঢাল থেকে
ঝালাইকারের যাবতীয় শৈলীর ভেতর
এমন নিভৃতে-

তোমার হর্ষেরা এইখানে অনাবিল ঝরে পড়ে
অস্পষ্ট নীল;
কোনো অক্সি-এসিটিলিন ফুল হয়ে ।

যেখানে মুদ্রিত শীত


মাফ্লারে নীলশীত,
প্রিজনভ্যানে চেপে অসুখী চেহারার বাচ্চারা
গড়িয়ে গেছে দূরে-
আদুরে চৌদ্দশিক ।
কলারে কলারে তীর্যক
খুলে গেছে কেমন বিভোর ফ্লানেল-রোদ !

আবেগী টাইপরাইটারে
সেই তাপ লেখা আছে শীতার্ত আঙ্গুলে,
থার্মাল বোধচ্যুত আবেশী অঞ্চলে ।

ঝরাপাতা
অবরোহণের গান শোনো ঐ,
নীলশীত ঢুকে আছে অনায়াস
সুপুষ্ট কাঠবাদামের ভেতরে ।

আমার শবানুগামী বোধ


শেষকৃত্যানুষ্ঠান থেকে ফিরে
আমি জনৈক আত্মীয়ার শোকাহত চোখ ভাবি,
বিস্রস্ত বসনহেতু চকিতে খুচরো কামনা
ও অগভীর যৌনতা ভাবি ।

চৌকস দর্জির মতো
আমি স্পর্শকামী এমন...
কব্জিতে বিচূর্ণ প্রহর এবং চোখে তার
সাময়িক কাজলহীনতা ভাবি ।

চোখ থেকে দস্তার মতো
গলে গলে রাত গ্যাছে,
আমি নিদ্রাহীনতা ও পাশাপাশি তার
সফল সঙ্গমপ্রনালী ভাবি ।

জঙ্ঘার কাছে রাত্রি আঁকা-
সুনির্মিত অগোছালোতা আমার,
উত্থানের অব্যবহিত পরেই লেখা
বহুমাত্রিক পতনপ্রকৃয়ার গান...

আমি শেষকৃত্য থেকে ফিরে এসে এখনো
আত্মীয়ার উদ্ভিন্ন সৌষ্ঠব ভাবি ।

কোবাল্ট জোত্স্নায় দক্ষিণট্রেইন


সিল্কের গোপনে সন্ধ্যে নেমে গেছে
অবরোহণের মসৃণতা আমার,
রোল করা সিগারেটের মতো
দক্ষিণে গড়ানো ট্রেইন
নির্মোহ ঢুকে গেছে অস্পষ্ট জোত্স্নায় ।

ফ্লয়েডীয় সুর সুতোবোনা নক্ষত্রের শিরায়
গহিন কারুকার্যে,
আমি গিলে ফেলি অস্পষ্ট সিলিং
ও বিবিধ আকাশ
কিছু প্রথাগত গানে ।

মৃদু সন্ধ্যের ভেতরে শায়িত
প্রগাঢ় মৌন সূঁচ,
ভেন্ট্রিলোকুইস্টের নড়ে ওঠা ঠোঁটে দ্যাখো
মিথ ও মিথ্যেরা
কী দারুণ গ্যাছে ঝরে !

আমি ট্রাকের চার্পিং শুনছি


আমি বসে তোমার কন্ঠে চার্পিং শুনছি
পাখিদের প্রতি করুণাবশত
ঈষদ বাঁকানো কালভার্টের পাশে
গোঙাতে থাকা ট্রাক
সেও বিস্তর তোমাকে শুনেছে,
হলুদ...হলুদ !

দ্যাখো, অনভ্যস্ত হর্ষের ভেতরে
প্রার্থনার মতো হুইসলগুলো
আমি এড়িয়ে যাচ্ছি সর্ষেক্ষেত
অথবা ঘুমজড়িত বনেটের ওপোর ।

বুড়োঢালগুলো নিবিড় অধিক,
আমি নিভৃতে বসে
তোমার শীত্কার শুনছি-
আপামর ট্রাকের প্রতি করুনাবশত ।

সমাধির গান


এইদেহ ছেদ করো
ত্রিকোণ কাঠের কীলক
এইদেহ ধূলো করো ।

শরীরমন্থনের শ্লোক,
জাগতিক জড়তা কাটিয়ে
এইদেহ ছাই করো
ঘোরতর তপ্ত আদরে ।

অন্তরঙ্গ হাওয়ায়
সুতোকাটা ঘুড়ির ভঙ্গীতে
ভেসে গ্যাছে যেই মেঘ
ঘোরলাগা প্রপেলারে সেই মেঘ ভাসে
বিনয়ী উচ্চতায়;
হিমার্দ্র রাতের কোনো
দূরতম আঁধার বিমানে ।

অতিঘুম পেরিয়ে এসো


ম্ব
স্বপ্ন হে আমার
ছেঁড়াক্রুশ গ্রীবায় তবু অক্লেশে,

ধমনীর নীলপথে তরল শুকোয়,
দেখেছিলে, তুষারের গায়ে ঝরেছিলো কেমন
ধূসর নেকড়ের ঘুম ?

ফ্রস্টেড গ্লাসের ওইপাশে


আমি দুলে উঠি ঘড়ির কাঁটায়
ব্যাংকের প্রহরীর অবিচল স্থৈর্যে,
স্থিরচিত্রের ভেতরে সারবাঁধা
অসংখ্য অনুভূতিশুণ্য মুখের কাছে,
আমি দুলে উঠি কোন গ্রাহকের
অপেক্ষমাণ দক্ষিণ হাতে ।

ইন্টার্ন মেয়েগুলোর চাপল্য ছাড়া
এইখানে বিনিময়যোগ্য কিছু নেই,
আর কিছু নেই ।
তাদের বিষাদোত্তীর্ণ খোঁপার বাঁধনে
যে অস্পষ্ট ল্যাবিরিন্থ কল্পিত হয়
আমি ঘুরে আসি সেইখানে-

ফ্রস্টেড গ্লাসের ওইপাশে; জিভকাটা ম্যানেজারের
অল্প অল্প স্পর্শকামীতার সাথে ।

রাতচারী পেইন্টারের জর্নাল


উপগত হওয়ার আগে অনেকের মতো আমিও
নভোদৃশ্য ভালোবাসি,
স্খলনোর্ধ কামুকের বোধ হয়ে
আমি লিখে দিচ্ছি অর্ধরতি
প্রণয়রহিত পালঙ্কের ওপোর ।

আমাদের গোলার্ধ ধোঁয়াশায় ছেয়ে আছে,
তুমি যৌনতা নামে যাদের চেনো ।
অতিক্রমের ভুলে আমি মুছে দিচ্ছি হরিদ্রনগর,
নীলছোপে আঁকা রাত্রি ।

মৃত হরকরা দ্যাখোনি-
অপ্রেমের খামে এসে গেছে মসৃণ
ভ্যানগগের কান !

টেলিফোন


টেলিফোন ঘুমিয়ে থাকে তৃতীয় কামরায়
আমাদের ক্রেডলবিন্যাসে
কোন হৃদয়জাত কল্ না এলে
বাতি জ্বেলে সমস্তরাত ঘুমানো যায়
মুঠোর ভেতরে অর্ধ-আলাপন লুকিয়ে

ক্লান্ত সহিসেরা


অস্পষ্ট খামার, তুমি শুনেছো বাতাসে খড়ের গান
দেখেছো, আস্তাবলকেন্দ্রিক ভাবনাগুলো
ঘোটকীরা কি করে ডিঙোতে চায় !
অথচ কখনো জানবেনা তারা
একঋতু দক্ষিণেই যাদের
শুয়ে ছিলো প্রান্তর,
লুকোনো ত্বরণ,
সবুজ ঘাস !

বুড়ো ঘোড়াগুলো অন্যপক্ষে নিলামে চড়ছে আজকাল
সার্কাস মালিকেরা যাদের
শীর্ণদামে কিনে নিতে অভ্যস্ত ছিলেন,
চাকুরীলুপ্ত সহিস ম্লান হেটে ফিরে গেলে
ঘোটকীরা ‘একা’ হবে দীর্ঘ রাতে,

আস্তাবলকেন্দ্রিক ভাবনায় ফের লীন হয়ে যেতে ।

অলীকপেন্সিল


করতল থেকে খুলে রাখি প্রার্থনা,
স্নায়ু থেকে রোদ
শ্যাওলা আঁকা ঈশ্বর ড্রইংরুমে বসে
রাত্রি লেখেন এবং সাপ,
যৌথশরীর লেখেন,
সাথে প্রপঞ্চ ও প্রেম ।

বেহেশ্তের নহরগুলো প্রবণতায়
ধীরে ধীরে পার্থিব হয়ে ওঠে,
গর্ভবীজ জানো তো,
আপেল সর্বনাশে কেমন
গাঢ়দাগের পতন লেখা !

বস্তুতঃ সব লেখা হয়ে আছে,
তিনি শুধু পর্যাপ্ত রুটি’ই লেখেননি ।

সিরামিক


নারীরা ঘুমিয়ে থাকে
পেয়ালার ঢাল বেয়ে রাত্রি
ধরে রাখে গোপন বিষাদ,
পেয়ালার ঢাল বেয়ে
জোত্স্না গড়িয়ে যাবে মৃদুহাস্যে,
জানালার প্রতিবেশে বুনে দেয়া
ঘুমবীজ; বীজঘুম ।

নারীরা ঘুমিয়ে থাকে
যেভাবে প্রণয় জেনেছে নীলাভ,
আধো-আধো ছায়া মেখে
দেহ থেকে তার
জোত্স্নারা খুলে আসে;
পেয়ালার ঢাল বেয়ে নেমে গেছে সকরুণ...
মৌনতা যার নাম !

দ্বিপাক্ষিক


আমি সাইনবোর্ডের নিয়ন খুলে দুর্বোধ্য
তোমার গালে বাণিজ্য আঁকি,
যেভাবে গ্রীবার উপকন্ঠে ভায়োলিন এসে
স্তরে স্তরে খুলে দেয় গোপন বিষাদ ।

আমি সাইনবোর্ডের নিয়ন খুলে প্রচারতন্ত্র
হরেক ঝাপ্সা এভিন্যু আঁকি
আর বিপণনের ভেতরে দেখি
ক্রমশ জেগে ওঠা বণিকের উরুপথ ।

পাতাবাহারের গায়ে জড়িয়ে হলদেটে
মলিন সন্ধ্যা নামে,
বিনিময়ের কব্জিতে শুধু বেড়ে চলে পারদ;
বিক্রয়যোগ্য রাত ।

ব্লাসফেমি


দয়িতের ঠোঁট থেকে মুছে গেলে নীল বিষ
কর্ষিত শরীরের ভাঁজে
কিছু দাগ রেখে যাবে গতরাত্রির লাঙ্গল,
মেঘদল ফিরে যাবে তাদের
স্বাভাবিক ব্রীড়ায় ।

উপাসনা থেমে গেলে ঘোরতর বর্ষায়
চেরা জিভ লুকায় বাস্তুসাপ,
আমি তখন আত্মা বিকোই
এ্যান্টিভেনম মূল্যমানে ।

আলপথে বাতাসের শাসন থেমে গেলে দেখি-
লিবিডো এখানে দাঁড়িয়ে মূলতঃ
ঈশ্বরেরও অধিক উচ্চতায় ।

অর্ধবিষাদ


আমি ভাবছি বালিয়াড়ি
বাতাসের পশ্চিম উড়ে যাওয়া,
চুলের ভেতর আনুপাতিক
কতটা আঁধার প্রোথিত...

নিভৃতে জমে ওঠা সমুদ্র-লবন
তুমি পরোক্ষে আমাকেই প্রভাবিত করো,
রোদেরাও জড়িত যেখানে
যৌথচাষ ও ক্ষরণে ।

আমি ভাবছি বালিয়াড়ি
এই আনত বিকেলে,
ক্লাউনের নাক থেকে উঠে আসা
প্রথাগত বিষাদের মতো ।

ডকইয়ার্ডে রচিত অবসাদ


হেলে যায়; হেলে যায় বৃত্তমগ্ন
ক্রোমিয়াম দিন আমার
লুপ্ত জাহাজেরা ঢলে যায়,
স্থবির কম্পাস
প্রিয়তম প্রতিবেশে নাবিক ঘুমিয়ে রয় ।

গাঙচিল হার্বারে ঝাপ্টায় দ্যাখো
কী দারুণ সৌম্য রোদের ডানা !
কেবিনে সুনীল-মদ,
নোঙ্গরে শ্যাওলা আঁকা-
এ সবি’ আসলে জলজতায় ।

রোদপর্বে সুউচ্চ মাস্তুল,
জাহাজের ক্লান্তি ঝরে লগবুকের জীর্ণতায়,
বো-তে হাওয়া দ্বিখন্ডিত যখন
সুদূরের চোখ মেলে জাহাজ ঘুমায় ।

এ্যারোনটিক্স


ঘুড়ি, বিমান বা হৃদয়
যাই ওড়াই না কেনো
আরো অধিক উড্ডয়ন প্রয়োজন ।

আমাদের চোখ নিয়ে গ্যাছে
পর্যবেক্ষক ঈগল
পৃথক আকাশের নীলে,
ভুলে যাই জুমলেন্সের গায়ে
লেগে থাকা ফ্যান্টাসি
শেষমেষ ক্যামেরাতেই ফিরে যাবে ।

তাই বুঝে নিতে হবে ইন্দ্রিয়াতীত,
নামছি যেখানে-
ভুলদেশ যেন নয় !

তুমি জেগে আছো


উল্টানো জাহাজের খোলে
মথিত ঢেউয়েরা মুদ্রিত হয়ে আছে;
শ্যাওলাসবুজ,
অথচ গতসমুদ্র লেখা ছিলো আমাদের
স্পর্ধিত মাস্তুলে ।

সবুজাভ রাতে জেগে আছো তুমি
তন্দ্রাহত বালিকা,
ম্লান কচ্ছপ হয়ে ব্যথালীন আছো পড়ে
তন্দ্রাহীন এই বালুচরে ।

উল্টানো জাহাজের খোল
নিগূঢ় বিজ্ঞান জেনে গেছে-
আর্তঝিনুকেরা এমন নক্ষত্র
পুষে রাখে কী করে !

কোপারনিকাসীয় রাত এসে ঢলে গেলে
লেন্সের অবতল ধার ঘেঁষে
তুমিও পিছলে এসো-
জাহাজের খোলে ।

প্রফুল্ল কৃষকের মুখ


আমি বিন্যস্ত রোদের ভেতরে দাঁড়িয়ে দেখি
মলিন প্রচ্ছদে ফুটে আছে
ফুলচাষীদের মুখের অস্পষ্ট ভাঁজ
ভেতরে যার মেধাবী এক ঋতু ঘুমিয়ে আছে,

মৌনতার ট্রলারে চড়ে
সেখানে এসে যাচ্ছেন মুখর ভ্যানগগ,
হরিদ্রটানে লিখে ফেলছেন দ্রুততায়
আশ্চর্য্য ফলনের গান ।

সুবর্ণরোদের ভেতর তাঁর সমস্ত সরঞ্জাম
ডুবে যাচ্ছে কী ভীষণ !
ফুলচাষীদের শিরদাঁড়া বেয়ে লতিয়ে উঠছে
একেকটা অজানা ফুলের নাম ।

ভুলবোতামের গান


লিফট্ অপারেটরের মৌনতার ভেতর
ডুবে আছে সমস্ত দুপুর
উড়ালদৃশ্য থেকে যখন পৃথক করেছি আমি
চপল চড়ুইয়ের
ঠোঁট, উড্ডয়ন ও পালক

আমি নির্গত হয়ে আছি দূরবর্তী জানালায়
আশ্চর্য গরাদহীনতা আমার !
বুকে আমূল বিদ্ধ হয়ে ভায়োলিন
আমি ক্রিয়াহীন পড়ে আছি
ভূ-দৃশ্যাবলী থেকে দুরে ।

গ্রীবা থেকে আমার ব্যথালীন সুর
নেমে গেছে
নেমে গেছে অবরোহে ।
লিফট্ অপারেটরের মৌনতার ভেতর
নিয়তই ডুবে থাকে এখানে
প্রতিটি দুপুর,
অথচ আমি বিভ্রান্ত তড়িতবিদ্যায়;
ভুলবোতামের গানে
লিফট্ অপারেটরের সাথে
স্বেচ্ছাবন্দী চড়ুইয়ের মিল খুঁজেখুঁজে।

অবসাদগুলো ঘুম হয়ে যায়


ক্রমশঃ ঘুমের ভেতরে
তুষারের মতো জমে প্রগাঢ় ধূসর
আমাদের হৃত্শব্দ পৌনঃপুনিক
এবং গভীরে নামবার ভয়,
অথচ পিঁপড়ের খনন
খুঁড়ে গেছে গভীরসময় ।

পিঁপড়েরা যেই পথে হাটে;
সেইপথে হাটি,
ঘোরতর ঘুমের ভেতরে গর্ত খুঁড়ে
ধূসর বোধহয় কিছু
এমনিসব ক্লান্তি খুঁজি ।

ঘুমের টানেলজোড়া
অতিপূর্ব অবসাদ আমাদের,
বালিশের নরোমে ঢুকে গেছে বহু
গতশীত...গতহিম এইসবকিছু ।

পিঁপড়ের পথে হেটে যেতে যেতে
হৃত্শব্দ ভুলে যাই,
এইশীতে বুক থেকে তুলে নেয়া হয়ে গেছে
বহু আকরিক ঘুম ।

কৌণিক গেঁথে আছে জোসেফিন


আকাশের নীচে বৃষ্টি
সবুজের নীচে যেমন ঘুমপ্রবণ ঘাস,
জোসেফিনের জন্যে ভেজা জানালা আমার
জোসেফিনের জন্যে গান ।

ক্যাবের ছাতে ছন্দ
ভেজা রাস্তা গড়িয়ে পরিশুদ্ধ টায়ার,
টুকরো হলুদের মাঝে এভাবে বর্ষা প্রদক্ষিণ
যেন কোথাও পৌছোঁতে পারিনা !

বিহ্বল আষাঢ়ের নীচে ভেজা বর্ষাতি আমার
ও বিধৌত নগর,
বহুদূর বর্ষায় কৌণিক গেঁথে আছে
জোসেফিন এখন;
ধূসর বোতলে বন্দী ধূসর সময় আমার ।

টিকিট হারিয়ে গেছে


নিস্পৃহ দর্শক জামার হাতায় খুব
করতালি লুকিয়ে নিলে
ম্যাজিশিয়ানের দস্তানার ভেতর
একে একে নিভে যায় সমস্ত খরগোশ,

অডিটোরিয়ামের ছাদ ফুঁড়ে কিছু আগে
যেইসব ঘুড়ি উড়ে গেছে
তার সাথে উড্ডীন আমাদের প্রবেশটিকিট
নিগূঢ় সংকেতে কোন ।

সবাক ইশারার ভেতর
পোস্টারফেরত ইন্দ্রবিদ্যা স্তিমিত হয়ে এলে
ম্যাজিকবিচ্যুত খরগোশেরা
নিস্পৃহ দর্শকের করতলে
কী অনাবিল হেসে ওঠে !!

গুটিয়ে আসে নিমগ্নতা


বর্তুলমেঘ অসংলগ্নতায় ওড়ে কেমন
দেখো এই বিনম্র শরতে !
অবিভাজিত আকাশ আমার,
হাওয়াও পরিবর্ত খেলে এবং বাঁচে ।
ধ্যানজ জ্ঞানে জেনেছি যতোটা-
বোধেরাই শুধু জীবাশ্ম এখানে ।

নিগূঢ় সঙ্গীত ক্রমে ঋতুময় হয়ে ওঠে,
দৃশ্যরাও উত্তীর্ণ সাহচর্যে...
ঘুমিয়ে পড়ো অবিভাজিত আকাশ আমার
শরতের গায়ে যেমন
রেখাহীন ভাঁজেরা ঘুমায় ।

জরাগ্রস্ত করিডোর


অযান্ত্রিকতা
স্পোক থেকে পিছলে সন্ধ্যে নামছে শহরে
আমার ভেতরে বৃষ্টি...
নিরাসক্ত শুয়ে থাকা এই শহরের
সমস্ত পথ যেন দিকচিহ্নহীন
ঢুকে আছে অপ্রমেয় ব্যাধির ভেতর ।

সান্ধ্য আঁধার,
আমি পূর্বস্মৃতি ভুলে আছি
আর জরাগ্রস্ত করিডোরে
শুশ্রুষার ভেতরে দেখছি তোমার
নিমগ্ন বর্ষাপ্রবণ চোখ।

বোহেম


স্থিরজলের মতো আমিও আত্মমগ্ন,
ঝোলা থেকে যখন ঈশ্বর জেগে ওঠেন ।
জড়বাদ কিছু - অবাক চার্বাক,
করতালি আঁকা দিনে বায়বীয় উল্কি আঁকা
স্বপ্ন হে আমার ।

প্রকৃতখনন ফুসফুসে ভরে নেয়া
এবং গৃহত্যাগী সাপ,
নদীমন্থনে জেগে ওঠে যখন
দূরতম গেরুয়া অঞ্চল
গানভোরে দেখো-
আমার শরীর কার্যতঃ নিঃস্পন্দ

হরিতাহত !

নীড়বদল


আসবাব রীতিতে স্থাণু হয়ে
ঘূণশিল্পে ধ্বসে যাই
ভিনকামরার ভেতর ধূসর মিথশব্দ খুঁজে,
কিছু ধুলো উড়ে গেছে নম্ররোদে
পালঙ্কের মলিন কারুকাজের সাথে
মিশে যেতে যেতে ।

’ট্রাঙ্ক’ শব্দটি সর্বাত্মকভাবেই
নীড়বদল সম্পর্কিত- এই সময়ান্তে,
আমি উল্লেখিত শব্দটিকে ভালোবাসিনা,
যেরকম অনায়াস বেসে থাকি
মৃত্তিকায় বিস্তৃত ’শেকড়’ শব্দটাকে ।

আমি নিভে যাই টেললাইট


আমি নিভে যাই এভিন্যুকেন্দ্রিক
বিষন্ন 'টেললাইটে'র আলো
আর গাঢ় মনস্তাপের মতো দেখি
বাসের ভেতরে কোথাও
সন্ধ্যা
___নে
____মে
_____গ্যাছে ।

তোমার দক্ষিণে যে সমুদ্রপথ
আমি তাকে সুশোভিত শুইয়ে রাখি
শহরচেরা সমস্ত রাস্তার কলরোলে,
আর দৃশ্যান্তরে খুব নিভৃতে ঢুকে যাই
মগ্নরাত...কোন অস্পষ্ট সমুদ্রপথে ।

আমি রৈখিক কিছু ভাবতে পারিনা,
গাঢ় অবসাদ কোথাও, খুব কাছে
আমি বিচ্যুত এবং এইরাতে নিভে যাই,
বোতামনিয়ন্ত্রিত জোত্স্নার
আশ্চর্য্য অপরিমিতির সাথে ।

নখাগ্রে


এক দীর্ঘ শীতের প্রস্তুতির ভেতরে
ঢুকে পড়েছে সমস্ত পাখিকুল,
প্রসারনের অনেক গভীরে যার
মেঘ উড়ে গেছে ।

নির্লোভ উলের বল
কারো আঙ্গুলের ওপোর
অনেক শৈলী হয়ে বাজুক,
ধ্যানরত বৃক্ষের বাকলে
হিমস্পর্শ জমে জমে
ঝরে যাক অলীকরাত্রি ।

গাঢ় শোক অনেক জেগে আছে যেমন
পাখির চঞ্চুতে...
উলের গ্রন্থিরা জানুক-
শীত বস্তুত ততোটা দীর্ঘ নয়
বিবিধ বিবরণে যেরকম লেখা আছে ।

জেলিভরা স্তনের পাশে
আমাদের কামনা মুছে যাক
মুছে মুছে যাক,
আর পাখিরা জানুক-
শীত কখনোই কোন
প্রতিশব্দ ছিলোনা প্রণয়ের ।

বিরহ, তুমুল বিরহ...
এমন দূরবর্তীতা আমাদের !
শীতার্ত ডানার বিস্তারে লিখে রাখা
অলস, স্তুপিকৃত রোদ ।

ঘুম ব্যালাড


প্রায়ান্ধকারে মহাদেশ-
দূরবর্তী নক্ষত্র চুঁইয়ে স্তব্ধতা নামছে,
আমাদের গোলার্ধ ঢেকে আছে
ছায়াবাসী ঘুম ।

অশ্বত্থের ডানাময় এখানে
প্রগাঢ় আদর শারীরিক,
ঘুমোঘুমো মেঘসুরের
রাত্রিময় ব্যালাড ।

জলশব্দের লিরিক আঁধারচেরা ক্রমশ,
শুধু বৃত্তচারী মানুষের করোটিতে
ফসিলায়িত ঘুম ।

যে চোখে বসন্ত


রৌদ্রবিলাস-
সন্ধ্যে গড়ায়, সন্ধ্যে গড়ায় হরিতবেশে,
বৃক্ষাভিলাষ-
স্বপ্ন জাগে রোদের আগে বিমানদেশে ।

শ্বেতপ্রাসাদে-
গ্রীষ্মচারী স্বপ্নে কেমন তুষার ঝরে !
‘চুপ’ভাষাতে-
গাইছে প্রণয় আদরজোড়া রৌদ্রঘরে ।

রাজারঘোড়া-
চলছে কেমন দুলকিচালে শীতপেরিয়ে !
সবুজ ওরা-
বসত গড়ে চোখের গভীর হিম এড়িয়ে ।

এপ্রিলে সে-
হিমের মেয়ে নয়তো মোটেই শ্বেতপাহাড়ী,
বন্ধ্যাদেশে-
তুন্দ্রাহেসে সুবর্ণ এক রেখায় জাগে হরিতনারী ।

আঁধারায়ন


কব্জির পরিধিতে সেঁটে আছে সময়ের ঘুম,
ঘেসোপথ...
সন্ধ্যের পায়ে হাটে অবাক মনোহরণ,
দৃশ্যতঃ এখন প্রাথমিক ফাল্গুন ।

একা একা সাইকেল হেলে থাকা বৃক্ষ;
একা একা করোটিতে দুঃস্বপ্নের ওম,
শরীরের নীল শিরা তাপাচ্ছে
প্রবহমান আঁধার তরল,

দয়িতের নাম একাধারে
’নিরবতা ও নির্জনতা’ ।

কব্জিতে কারো স্পর্শের দাগ নেই
শুধু সময়ের ঘুম,

নগ্ন পাহাড় ব্রীড়াবশে নামাচ্ছে সন্ধ্যে...
ওইধারে পশ্চিমকোণ ঘেঁষে
সোভিয়েত-লাল মেঘ
গত হয়ে গ্যাছে ধীরে
সন্ধ্যের যোনিতে ।

গ্যালিলিও’র টেলিস্কোপ


ট্র্র্যাপিজের তার ধরে হাটছে বিষাদ,
শুণ্যে শরীর ভাসিয়ে
এক্ষুনি অতিক্রম করে যাবে
সমস্ত প্যারাবোলিক দুরত্ব ।

জানালার গায়ে গলে গলে পড়ছে
ক্যাপ্রিকর্ন জোত্স্না,
মিশে যাচ্ছে প্রচ্ছায়ায়...

সমগ্র জীবন ব্যবচ্ছেদ করে দেখি-
ভুল নক্ষত্রের পানে চেয়ে
গ্যালিলিও’র টেলিস্কোপ ।

কাকলী স্কুলের মেয়েরা


আমার একটাও পাখি নেই !
ফলে স্বভাবতই আমার কোন চিঠি আসে না,
তবুও টিফিনসময়ে একনিষ্ঠে
বালিকাবিষয়ক নানা বিভ্রমের কথা ভাবি...
আহা প্রস্ফুটন !

ডুঁকরে ওঠা ডাকবাক্সগুলোর শোক
আমাকে ভীষণ দখল করতে আসে ।
আমার নিজস্ব ঘন্টাধ্বনির ভেতরে যেন
হারিয়ে গেছে সেইসব
প্রার্থিত পাখিদের ঠোঁট, ফলন্ত ডাকবাক্স
আর আপাতঅসীম সমস্ত পথ !

স্থবির ক্লাসরুমে বসে এখোনো
আমি ভুলে যাওয়া ঘাসফুলের
প্রাথমিক রংটা ভাবি ।

শুলামিথ


গোধূলীর চেয়ে রক্তেরা ভালোবাসছে অন্ধকার,
তোমার সোনালী চুল এখানে
ভস্মাভ হয়ে আছে মার্গারিট,
সমাধির নিরবতা রয়ে গেছে
গভীর থেকে আরো
গভীরতর কোন মৃত্তিকায় ।

ক্লান্ত ময়ালের মতো মৃত্যু হাটে সর্পিল,
যদিও তোমার ভস্মাভ চুল
বিকেলের রোদরং চুরি করে-

শুধু কার্পেথিয়ানের কাফনগুলো
নাত্সী-অন্ধকারে ডুবে যায় ।

আয়নাঘর


বহুদিন তোমায় চমকে দেবার মতো
কোন চরণ মনে পড়েনা !
মনে পড়ে শরীর ঢেকেছিলো শরীর
বিস্মৃত টেরাকোটা...
একটু একটু করে
নিজস্ব অন্ধকারে ডুবে যাওয়া ।

বসন্ত-ঘুঙুর থেমে গেলে
বিষন্ন দর্পণ থেকে
মুছে যায় কারো মুখ
নিস্তরঙ্গ আয়নাঘরে,

বসন্ত আসে কি আর
ক্লান্ত ঘুঙুরের নিমন্ত্রণে !

কীলকের স্পর্শ পাই


আমি নির্জন হয়ে থাকি সন্ধ্যেবেলা,
বেসিনের ওপরের ঢেউখেলা আয়নায় মৃতবত্ দেখি
সিলিঙে ঝুলে আছে অস্পষ্ট যৌনতার ফুল ।

মিলনঋতুর গহিনে সব সুর এঁকেবেকে চলে গেছে,
বিমোহিত আমি সাপ ।
সৌষ্ঠব থেকে তার যৌথআপেলেরা নেমে এলে
অবসাদে রাত জাগে;
ভুলপায়ে ফিরে চলা দয়িত আমার ।

স্তোত্রসুর করুণ চিরে ফেলে রাত,
ডাইনীর নখে নখে জমে থাকা এমন
বিক্ষত আঁধার !